একজন রাজু, আরেকজন বাবুরাও। পর্দায় তাঁদের কাণ্ডকীর্তি দেখে হাসেননি এমন দর্শক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আপনি যদি জনপ্রিয় ধারার হিন্দি সিনেমার দর্শক হয়ে থাকেন, তাহলে ‘হেরা ফেরি’ ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে যে কথা হচ্ছে, সেটা এতক্ষণে বুঝে যাওয়ার কথা। তাহলে এটাও জানার কথা ২০০০ সালে ‘হেরা ফিরি’, ২০০৬ সালে ‘ফির হেরা ফিরি’র পর ‘হেরা ফিরি ৩’ নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছিল। এর মধ্যেই হঠাৎ ছবিটি থেকে বেরিয়ে গেছেন বাবুরাও চরিত্রের অভিনেতা পরেশ রাওয়াল, যা নিয়ে শুরু হয়েছে তুলকালাম।
কী নিয়ে ঘটনা
‘হেরা ফেরি’ সিনেমার কথা মনে এলেই যে তিনজনের মুখ সবার আগে মনে পড়ে, তাঁরা হলেন অক্ষয় কুমার, সুনীল শেঠি ও পরেশ রাওয়াল। এই তিনজনের জুটি আরও একবার মানুষ বড় পর্দায় দেখতে পাবেন, এ ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গেই আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিলেন দর্শকেরা। সবকিছুই মোটামুটি ঠিক হয়ে গিয়েছিল। চুক্তি স্বাক্ষর করে ফেলেছিলেন অভিনেতারাও। কিন্তু সব ঠিক থাকা সত্ত্বেও আচমকাই ছবি থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন পরেশ। পুরো ব্যাপারটিতে রীতিমতো স্তম্ভিত হয়ে যান সবাই। যদিও পরেশ জানান, তিনি এ ছবির অংশ হতে চাইছেন না, তাই ছবি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। পরিচালক বা অন্য অভিনেতাদের সঙ্গে কোনো মতবিরোধ তৈরি হয়নি তাঁর।
মামলা করবেন অক্ষয়
‘হেরা ফেরি’র অপরিহার্য চরিত্র ‘বাবুরাও’। তাঁর এমন ঘোষণায় চমকে গেছেন রাজু চরিত্রে অভিনয় করা অক্ষয় কুমার। পরেশের বিরুদ্ধে প্রায় ২৫ কোটি রুপির (প্রায় ৩৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা) মানহানির মামলা করতে চলেছেন তিনি। অক্ষয়ের প্রযোজনা সংস্থা ‘কেপ অব গুড ফিল্মস’-এর পক্ষ থেকে পরেশকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, অক্ষয় কুমার পরেশ রাওয়ালের বিরুদ্ধে প্রধানত দুটি অভিযোগ এনেছেন—‘অপেশাদার আচরণ’ ও চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পরও ‘হেরা ফেরি ৩’ থেকে বেরিয়ে যাওয়া। উল্লেখ্য, অক্ষয় কুমার ‘হেরা ফেরি ৩’ প্রযোজকও। তিনি প্রযোজক ফিরোজ নাদিয়াদওয়ালার কাছ থেকে এ স্বত্ব কেনেন। নির্মাতা প্রিয়দর্শনের পরিচালনায় অক্ষয় কুমারের প্রযোজনা সংস্থা ‘কেপ অব গুড ফিল্মস’–এর ব্যানারে ‘হেরা ফেরি ৩’–এর নির্মানকাজ চলছিল। অক্ষয় তাঁর প্রযোজনা সংস্থা কেপ অব গুড ফিল্মসের মাধ্যমে এ আইনি লড়াইয়ে নামতে যাচ্ছেন।
চলতি বছরের এপ্রিল থেকে শুরু হয় ‘হেরা ফেরি ৩’–এর শুটিং। শুটিং চলাকালে হঠাৎই পরেশের সিনেমা থেকে সরে দাঁড়ানো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি বিরাট ধাক্কা। শুধু প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান নয়, পুরো ‘হেরা ফিরি’ টিম এখনো এ সিদ্ধান্ত মানতে পারেনি।
এই প্রথম নয়
৩৫ বছরের বলিউড–জীবনে এই প্রথম কোনো সহকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছেন অক্ষয় কুমার। তবে পরেশের জীবনে এমন হঠাৎ সরে আসার ঘটনা নতুন নয়। এর আগে তিনি ‘ওহ মাই গড ২’ ছবি থেকেও সরে এসেছিলেন ২০২৩ সালে। সেবার দাবি করেছিলেন, তাঁর চিত্রনাট্য পছন্দ হচ্ছে না। ২০০৯ সালেও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল কথা দিয়ে কথা না রাখার। সেবার তিনি সরে এসেছিলেন শাহরুখ খানের ‘বিল্লু বারবার’ থেকে। ঘটনাচক্রে সে ছবির পরিচালকও ছিলেন প্রিয়দর্শন।
কী বলছেন নির্মাতা
পুরো বিষয়টি নিয়ে প্রিয়দর্শনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন, ‘পরেশ আমাকে কিছুই জানাননি। তবে এখানে আমার হারানোর কিছুই নেই। অক্ষয়ের রেগে যাওয়ার কারণ অক্ষয় এ সিনেমায় টাকা বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু আমি এটা ভেবেই অবাক হয়ে যাচ্ছি, এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পরেশ একবার আমার সঙ্গে কথা বলতে পারতেন।’
স্তম্ভিত সুনীল
পরেশের এ সিদ্ধান্ত আরেক সহ-অভিনেতা সুনীল শেঠিকেও অবাক করেছে। তিনি ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম কারও সঙ্গে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছে। ভাবলাম, মেসেজ করি। তারপর দেখা করে আলোচনা করব। কিন্তু পরে জানতে পারলাম, কারও সঙ্গে এ ব্যাপারে কোনো কথা হয়নি। অক্ষয়ও জানে না কী কারণে তিনি এটা করেছেন।’
সাক্ষাৎকারে সুনীল আরও বলেন, ‘আমরা ছবিটা প্রায় অর্ধেক শুট করেছি। আগামী বছর সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। আমরা এমনকি একটি প্রমোও শুট করে ফেলেছি। পরেশের মাঝপথে চলে যাওয়ার আমি কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারছি না। পরেশের “বাবুরাও” চরিত্রটি “হেরা ফেরি” সিনেমার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। আমি পরেশকে ছাড়া এ সিনেমা ভাবতেই পারছি না।’
কী বলছেন পরেশ
পরেশ রাওয়াল ভারতীয় গণমাধ্যম ‘মিড ডে’কে জানিয়েছেন, ‘আমি জানি এটা সবার জন্য একটি ধাক্কা। প্রিয়দর্শন পরিচালিত এ সিনেমায় আমরা তিনজন একসঙ্গে ছিলাম। কিন্তু আমি নিজেকে আর এ সিনেমার অংশ ভাবতে পারছি না। তাই আমি সরে দাঁড়িয়েছি।’ নির্মাতা প্রিয়দর্শনের সঙ্গে তাঁর এ ব্যাপারে কোনো ধরনের সৃজনশীল মতবিরোধ হয়নি বলে আবারও জানান তিনি।
ভাইরাল পুরোনো মন্তব্য
অক্ষয় কুমারের সঙ্গে বহু ছবিতে কাজ করেছেন, তবু আক্কি নাকি তাঁর বন্ধু নন। সম্প্রতি পরেশ রাওয়ালের এমন মন্তব্য নিয়ে শুরু হয়েছিল চর্চা। ‘হেরা ফিরি ৩’ বিতর্কের মধ্যে নতুন করে আবার চর্চায় সেই সাক্ষাৎকার। পরেশ বলেছিলেন, অক্ষয় তাঁর বন্ধু নন, বরং একজন সহকর্মী। তাঁর এমন মন্তব্যে অনেকেই ভেবেছিলেন, তাঁরা দুজনে একসঙ্গে বহু সিনেমায় কাজ করলেও পর্দার বাইরে তাঁদের সম্পর্ক হয়তো ভালো নয়। পরে মন্তব্যের ব্যাখ্যা দেন পরেশ রাওয়াল।
বলিউড হাঙ্গামাকে অভিনেতা বলেন, ‘মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আমি শুধুই বলেছিলাম যে উনি একজন সহকর্মী। আসলে যখন আপনি কাউকে বন্ধু বলেন, তার মানে আপনি তাঁর সঙ্গে মাসে ৫-৬ বার দেখা করেন এবং তাঁদের সঙ্গে আপনি সপ্তাহে অনেকবার কথা বলেন। এ ছাড়া আমি সামাজিক নই, অক্ষয়ও নন, তাই একে অপরের সঙ্গে পার্টি করাও সম্ভব নয়। এ কারণেই আমি তাঁকে সহকর্মী বলেছি। কিন্তু প্রশ্ন করতে লাগল, কী হয়েছে? কিন্তু কিছুই হয়নি।’
‘হেরা ফেরি’ জাদু
‘হেরা ফেরি’ ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রথম সিনেমা ‘হেরা ফিরি’ ২০০০ সালে মুক্তি পায়। এতে অভিনয় করেন অক্ষয় কুমার, পরেশ রাওয়াল ও সুনীল শেঠি। আরও ছিলেন টাবু। সিনেমাটি মুক্তির পর এই ত্রয়ী দর্শকদের মন জয় করে নেয়। অনেকের মতে, সেরা হিন্দি কমেডি সিনেমার একটি এটি। ছবিটি ছিল সেই বছরের সবচেয়ে ব্যবসাসফল সিনেমার একটি। সাড়ে সাত কোটি রুপি বাজেটের সিনেমাটি প্রায় ২২ কোটি রুপি আয় করে।
আরও পড়ুন
‘হেরা ফেরি’ সিনেমার সাফল্যের পর ২০০৬ সালে মুক্তি পায় সিরিজটির দ্বিতীয় ছবি ‘ফির হেরা ফেরি’। তবে প্রিয়দর্শন নন, এটি পরিচালনা করেন নীরজ ভোরা। ১৮ কোটি রুপি বাজেটের ছবিটি প্রায় ৭০ কোটি রুপি আয় করে। দুই দশক পর এ সিনেমার সিকুয়েলের ঘোষণায় নড়েচড়ে বসেছিলেন ভক্তরা। সঙ্গে নির্মাতা হিসেবে প্রিয়দর্শনের ফেরা নতুন আশা তৈরি করেছিল। কিন্তু পরেশ সরে দাঁড়ানোয় ‘হেরা ফেরি ৩’-এর ভাগ্য এখন অনিশ্চিত।
আরও পড়ুন